যাকাত অর্থনীতি সম্রদ্ধি এবং উন্নয়ন (সামাজিক নিরাপত্তা)
যাকাত কী?
যাকাত অর্থনীতি সম্রদ্ধি এবং উন্নয়ন (সামাজিক নিরাপত্তা)। ইসলামের মূল পাচঁটি ভিতির মধ্যে যাকাত অন্যতম একটি ভিত্তি। আল্লাহ পাক পবিত্র কোরআনে অসংখ্যা বার যাকাতের কথা বলেছেন।আল্লাহ পবিত্র কোরাআনে যত বার সালাত আদায় করার কথা বলেছেন সাথে সাথে যাকাতে আদায় করার কথা বলেছেন কাজেই যাকাতের গুরুত্ব অপরিসীম।যাকাত অর্থ পবিত্রতা সহিত বৃদ্ধি পাওয়া, এখানে সম্পদের পবিত্রতা কথা বলা হচ্ছে এবং সম্পদের বৃদ্ধি পাওয়ার কথা বলা হচ্ছে। মনে রাখতে হবে যাকাত গরিবের হক বা পাওনা তাই পাওনা পরিশোধ আবশ্যকিয়।
যাকাতের উদ্দেশ্য
যাকাতের উদ্দেশ্য হল অর্থনৈতিক ভাবে সামাজিক নিরাপত্তার মাধ্যমে দারিদ্যতা বিমোচন করা।
যাকাতের হিসাবকাল
ইহা অনেকটা Fiscal year অথবা Accounting year এর মত আমরা যেমন কোন কোম্পানি XYZ Ltd. এর হিসাব কাল জানুয়ারি-ডিসেম্বর ধরতে পারি তেমনি জুলাই-জুন ও ধরতে পারি। ঠিক তেমনি যাকাত হিসাব কাল ও মনের মত করা যায় অর্থাৎ আপনার সম্পদ বা অর্থ নিসাব পরিমান বা যাকাতযোগ্য হবে তার থেকে একবছর হিসাবে যাকাত প্রদান করতে হবে। তবেসাধারনত আমরা রমজান থেকে রমজান হিসাব করে থাকি।
যাকাত আদায়ের মাধ্যম:
Zakat in Quran.
১.ফসলের বা শস্যের ক্ষেত্রে যাকাত ফসল বা শস্যের মাধ্যমে আদায় করা যায় তবে কেউ চাইলে তাহা সমপরিমান অর্থের মাধ্যমে আদায় করিতে পারবে।
২.গবাদি পশুর ক্ষেত্রে যাকাত গবাদি পশু অথবা নগদ অর্থের মাধ্যমে আদায় করতে পারিবে।
৩.স্বর্ণেরক্ষেত্রে স্বর্ণের অংশ বা নগদ অর্থের মাধ্যমে যাকাত আদায় করা যাবে।
৪.রুপা ও নগদ অর্থের ক্ষেত্রে নগদ অর্থের মাধ্যমে যাকাত আদায় করতে হবে।
৫.ব্যবসায়িক সামগ্রি(কাঁচামাল,মজুদপণ্য,নগদতহবিল,দেনাদার ইত্যাদি)ক্ষেত্রে নগদ অর্থের মাধ্যমে যাকাত আদায় করতে হবে।
যাকাত কাদের কে দিবেন?
যাকাত অর্থনীতি সম্রদ্ধি এবং উন্নয়ন (সামাজিক নিরাপত্তা)
Zakat in Quran.
যাকাত অর্থনীতি সম্রদ্ধি এবং উন্নয়ন (সামাজিক নিরাপত্তা)। যাকাত ৮ শ্রেণীর লোককে দেওয়া যায়।
- ফকির
- মিসকিন
- যাকাত ফান্ডে যে বা যারা চাকুরি করবে তাদের বেতন।
- অন্য ধর্মের লোকজনকে
- দান মক্তির জন্য
- ঋনী ব্যক্তির ঋন পরিশোধের জন্য
- আল্লাহ রাস্তায় যারা কাজ করে মজলুম
- পথিক বা মুছাফির যদি সে পথিক বা মুছাফির চপরে থাকা অবস্থায় নিজস্ব হারে যায় যদি মে তার নিজ এলাকার বড়লোক যাকবে।
- যাকাত কারা দিবে
নিসাব পরিমান সম্পদ হলেই যাকাত দিতে হবে অর্থাৎ কারো যদি নিসাব পরিমান সম্পদ হয় তাহলে সেই যাকাত দিতে হবে।
যাকাত যোহ্য সম্পদ ও যাকাতের হার
যাকাত অর্থনীতি সম্রদ্ধি এবং উন্নয়ন।(প্রয়োজনীয়তা)
১.গবাদি পশুর ক্ষেত্রে
- ২৫টি উট হলে ১টি উট যাকাত দিতে হবে।
- ৩০টি গরু হলে ১টি গরু যাকাত দিতে হবে।
- ৪০টি ছাগল হলে ১টি ছাগল যাকাত দিতে হবে।
২.ফসল বা শস্য:এমন সব ফসল যাহা দীর্ঘদীন রাখা যায় যেমন:ধান,গম,ভুট্রা,ডাব,খেঁজুর ইত্যাদি।ফসল বা শস্যের ক্ষেত্রে যাকাত হার:
- যদি সেচ করা হয় তাহলে ১/২০(বিশ ভাগের এক ভাগ)
- যদি সেচ করা না হয় তাহলে ১/১০(দশ ভাগের এক ভাগ)
- যাকাত যোগ্য শস্যোর পরিমান ১৮ মন ৩০ কেজি।
৩.স্বর্ণ ৭ এবং ১/২ ভরি হলে তাহলে ২.৫% হারে যাকাত দিতে হবে স্বর্ণের যাকাত হিসাব বাজার মূল্য অনুযায়ী হবে।
৪.রুপা ৫২ এবং ১/২ তোলা অথবা তদপরিমান নগদ অর্থ ব্যাংক জমা,DPS,FDR কাউকে ঋন প্রদান ইত্যাদি নগদ যোগ্য অর্থের উপর ২.৫% হারে যাকাত দিতে হবে।
ব্যবসায় বিনিয়োগের ক্ষেত্রে:
যাকাত অর্থনীতি সম্রদ্ধি এবং উন্নয়ন।(শুদ্ব নিয়ম)
- যদি এক মালিকানা হয় তাহলে ব্যাবসায়ের নিদিষ্ট তারিখের কাঁচামাল,মুজদপণ্য,নগদ অর্থ, ব্যাংকে জমা ইত্যাদি।
- যদি অংশীদারি কারবার বা ব্যাবসায়ের শেয়ার হোল্ডার হন এক্ষেত্রে ও ব্যবসায়ের কাঁচামাল, মুজদপন্য, নগদ অর্থ,ব্যাংকে জমা ইত্যাদি এর আপনার অংশবা শেয়ার।
উল্লেখ্য উভয়ক্ষেত্রে যদি কাঁচামাল বা মুজদপণ্যের জন্য ঋন নেওয়া হয় তাহলে ঋনের অংশ বাদ যাবে।তবে কোন স্থায়ী সম্পদ ঋন বা দীর্ঘ মেয়াদী ঋন বাদ যাবে না কারণ তাহা স্থায়ী সম্পদ ক্রয়ের জন্য নেওয়া হয়েছে।
যাকাত মুক্ত সম্পদ
যাকাত অর্থনীতি সম্রদ্ধি এবং উন্নয়ন (সামাজিক নিরাপত্তা)
১.বাড়ী,জমি, ফ্ল্যাট ইত্যাদির উপর যাকাত দিতে হয় না তবে শর্ত থাকে যে বাড়ী, জমি ফ্ল্যাট ইত্যাদি কেনা বেচা যদি ব্যবসা হয় তাহলে নিদিষ্ট তারিখের সম্পদের উপর যাকাত দিতে হবে।
২.গাড়ী উপর যাকাত দিতে হবে না তবে যদি গাড়ী কেন বেচা যদি ব্যবসা হয় তাহলে মুজদ গাড়ীর উপর যাকাত দিতে হবে।
দৈনদিন্দ ব্যবহৃত আসবাবপত্র ও সরঞ্জামের উপর যাকাত দিতে হয় না তবে ইহা যদি ব্যবসা হয় তাহলে যাকাত দিতে হবে।
এককথায় ব্যবহৃত জিনিসপত্র এবং স্থায়ী সম্পদের উপর যাকাত দিতে হয় না তবে স্থায়ী সম্পদ বা ব্যবহৃত জিনিস কেনা বেচা যদি ব্যবসায় হয়ে থাকে তাহলে যাকাত দিতে হবে।
কি যাকাত থেকে বাদ যাবে:
যাকাত অর্থনীতি সম্রদ্ধি এবং উন্নয়ন।
যাকাত যোগ্য সম্পদ অর্জনের জন্য ঋন নেওয়া হলে তাহা যাকাত যোগ্য সম্পদ থেকে বাদ যাবে উল্লেখ্য যাকাত যোগ্য সম্পদ নয় এমন সম্পদ অর্জনের জন্য ঋন নিলে তাহা যাকাত যোগ্য সম্পদ থেকে বাদ যাবে না।
যেমন:করিম সাহেব বাড়ী করার জন্য ১,০০০,০০০ লক্ষ টাকা ঋন নিয়েছে। বছর শেষে করিম সাহেব এর যাকাত যোগ্য সম্পদের পরিমান ১,৫০০,০০০ লক্ষ টাকা, এখন করিম সাহেব যাকাত হিসাব করার সময় তার ঋন ১,০০০,০০০ লক্ষ টাকা বাদ দিতে হবে না কারণ উক্ত ঋন উনি যাকাতযোগ্য সম্পদ অর্জনের জন্য গ্রহন করে নাই।